রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেড (RIL), ভারতের বৃহত্তম বেসরকারি কোম্পানি, শেয়ার বাজারে একটি শক্তিশালী নাম। এর বৈচিত্র্যময় ব্যবসা এবং উদ্ভাবনী কৌশল এটিকে বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এই আর্টিকলে আমরা রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিস শেয়ার প্রাইসের বর্তমান অবস্থা, আগামী দশ বছরের সম্ভাবনা, ঝুঁকি এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য পরামর্শ নিয়ে আলোচনা করব।
রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিস কোম্পানি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিস তেল ও গ্যাস, পেট্রোকেমিক্যাল, রিটেল, টেলিকম, এবং নতুন শক্তি ফিল্ডে কাজ করে। মুকেশ আম্বানির নেতৃত্বে, কোম্পানিটি রিলায়েন্স জিও এবং রিলায়েন্স রিটেলের মাধ্যমে ডিজিটাল ও ভোক্তা বাজারে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ২০২৫ সালে এর বাজার মূলধন প্রায় ২০.২৪ লক্ষ কোটি টাকা, যা ভারতের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানির মর্যাদা দেয়।
বর্তমান বাজার বিশ্লেষণ (২০২৫)
২০২৫ সালের জুন মাসে রিলায়েন্সের শেয়ার প্রাইস প্রায় ১৪৯৫ টাকার কাছাকাছি রয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ১৭.৪৮% বৃদ্ধি পেয়েছে। কোম্পানির ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট আয় ১০.৭১ লক্ষ কোটি টাকা এবং নিট মুনাফা ৮১,৩০৯ কোটি টাকা। P/E অনুপাত ২৮.৪৯ এবং ROE ৮.৫১% বাজারে এর শক্তিশালী অবস্থান নির্দেশ করে। জিওর ৫জি সম্প্রসারণ এবং রিটেল খাতের প্রবৃদ্ধি শেয়ার প্রাইসের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতাকে সমর্থন করছে। তবে, উচ্চ P/E অনুপাত স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের জন্য সতর্কতার ইঙ্গিত দেয়।
আগামী ১০ বছরের সম্ভাবনা (২০২৫-২০৩৫)
বিশ্লেষকদের মতে, রিলায়েন্সের শেয়ার প্রাইস ২০৩৫ সালের মধ্যে ৩৯০০-৫০০০ টাকায় পৌঁছতে পারে। কোম্পানির নতুন শক্তি উদ্যোগ, যেমন ১০০ গিগাওয়াট সৌর গিগা ফ্যাক্টরি এবং ৫৫টি সংকুচিত বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট, ২০৩৫ সালের মধ্যে নেট-জিরো কার্বন লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। জিওর ৫জি নেটওয়ার্ক এবং রিটেল খাতের সম্প্রসারণ রাজস্ব বৃদ্ধির অন্যতম চালিকাশক্তি। বিশ্লেষকদের ৯১.৪৩% ‘বাই’ রেটিং এবং গড় লক্ষ্যমূল্য ১৬০০.৫০ টাকা (২০২৫) দীর্ঘমেয়াদি সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়।
আমরা যদি ধরে নিই কোম্পানি প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট বৃদ্ধির হার (CAGR) বজায় রাখতে সক্ষম হয়, তাহলে ভবিষ্যতের মূল্য কিছুটা এই রকম হতে পারে:
বার্ষিক বৃদ্ধির হার (CAGR) | সম্ভাব্য শেয়ার মূল্য (২০৩৫ সালে) |
১০% | ₹৩৮৭৭.৬৪ |
১৫ % | ₹৬০৪৮.১১ |
২০% | ₹৯২৫৬.৬৫ |
২৫% | ₹১৩,৯২৩.২৭ |
৩০% | ₹২০,৬০৯.৮৪ |
এখানে বর্তমান মূল্য ₹১৪৯৫.০০ ধরা হয়েছে। উল্লিখিত হারগুলো বাস্তবসম্মত ও ঐতিহাসিক আয়-বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ঝুঁকি ও সতর্কতা
রিলায়েন্সের শেয়ার প্রাইসের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাজারের অস্থিরতা, তেলের দামের ওঠানামা, এবং টেলিকম ও রিটেলে তীব্র প্রতিযোগিতা। ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি এবং নিয়ন্ত্রক পরিবর্তনও প্রভাব ফেলতে পারে। উচ্চ ঋণ (১১৭,০৮৩ কোটি টাকা, ২০২৫) এবং মুদ্রাস্ফীতি মুনাফার মার্জিনে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের জন্য শেয়ারের উচ্চ মূল্যায়ন ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
বিনিয়োগকারীদের জন্য পরামর্শ
দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের জন্য রিলায়েন্স একটি আকর্ষণীয় বিকল্প, বিশেষ করে এর বৈচিত্র্যময় ব্যবসা এবং নতুন শক্তি উদ্যোগের কারণে। তবে, স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের বাজারের অস্থিরতা এবং উচ্চ P/E বিবেচনা করা উচিত। পোর্টফোলিও বৈচিত্র্যকরণ এবং ধাপে ধাপে বিনিয়োগ ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে। আর্থিক উপদেষ্টার পরামর্শ নিয়ে বিনিয়োগ করুন।
উপসংহার
রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিসের শেয়ার প্রাইস আগামী দশকে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা রাখে, বিশেষ করে এর নতুন শক্তি এবং ডিজিটাল উদ্যোগের কারণে। তবে, বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি বিবেচনা করে সতর্কতার সাথে এগোনো উচিত। সঠিক কৌশল এবং বিশ্লেষণের মাধ্যমে রিলায়েন্সের প্রবৃদ্ধির সুযোগ কাজে লাগানো সম্ভব।
🔔 আপনি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিস শেয়ারে বিনিয়োগের ব্যাপারে কী ভাবছেন? নিচে কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না!
📢 আপনার বন্ধুদের সঙ্গে এই আর্টিকেলটি শেয়ার করে দিন, যারা দীর্ঘমেয়াদী শেয়ার মার্কেট বিনিয়োগে আগ্রহী।
আরও পড়ুন: ভোল্টাস শেয়ার প্রাইস আগামী ১০ বছর পর কোথায় যাবে? গোপনে জানুন!
(sharebhumi.com কোথাও বিনিয়োগের জন্য পরামর্শ দেয় না। শেয়ার বাজার বা যে কোনও ক্ষেত্রে লগ্নি ও বিনিয়োগ ঝুঁকি সাপেক্ষ। তার আগে ঠিকমতো পড়াশোনা এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শ বাঞ্ছনীয়। এই খবরটি শিক্ষা সংক্রান্ত এবং সচেতন করার জন্য প্রকাশিত।)